মাদকের রাজধানী গোদাগাড়ীর সক্রিয় তালিকাভুক্ত মাদক কারবারীরা ধরা ছোঁয়ার বাইরে

মাদকের রাজধানী গোদাগাড়ীর সক্রিয় তালিকাভুক্ত মাদক কারবারীরা ধরা ছোঁয়ার বাইরে

মাদকের রাজধানী গোদাগাড়ীর সক্রিয় তালিকাভুক্ত মাদক কারবারীরা ধরা ছোঁয়ার বাইরে
মাদকের রাজধানী গোদাগাড়ীর সক্রিয় তালিকাভুক্ত মাদক কারবারীরা ধরা ছোঁয়ার বাইরে

নিজস্ব প্রতিবেদক: গোদাগাড়ীর তালিকাভুক্ত ১৯৮ জন মাদক ব্যবসায়ী বীর দাপটে চলাচল করলেও রহস্যজনক কারণে প্রশাসন রয়েছে নীরব!

উল্লেখযোগ্য মাদকের ডিলার ও গডফাদাররা হলো: গোদাগাড়ী থানার শহিদুল ইসলামের ছেলে নাসির। একই থানার বারুই পাড়া গ্রামের সিরাজুল ইসলামের ছেলে হোসেন আলী, মাদারপুর গ্রামের আব্দুল গনির ছেলে গোলাম মোস্তফা টিয়া, ইসরাইলের ছেলে ইবরাহীম, মহিশাল বাড়ি সাগর পাড়া গ্রামের নাজিমুল ইসলামের ছেলে রায়হান ওরফে ভন্ডুল, মহিশাল বাড়ি সাগর পাড়া গ্রামের সাইফুল ইসলামের ছেলে সনি, মহিশাল বাড়ি সাগর পাড়া গ্রামের মৃত আবুল হোসেনের ছেলে হেলাল উদ্দিন, একই এলাকার মৃত মুরশেদ ফাটার ছেলে সাদিকুল ইসলাম।

রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার সীমান্তবর্তী পথগুলো দিয়ে ব্যাপকহারে দেশে অনুপ্রবেশ করছে হেরোইন, ফেনসিডিল, দামি মদসহ বিভিন্ন ধরনের মাদকদ্রব্য। ফলে ধ্বংসের দারপ্রান্তে যুব সমাজ। প্রতিদিনই এসব মাদকদ্রব্য মাদক চোরাকারবারিরা ভারত থেকে চোরাই পথে এনে মাদক সিন্ডিকেটের মাধ্যমে পুরো রাজশাহীর চাহিদা পূরণ করে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে তা ছড়িয়ে দিচ্ছে। ফলে দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম ছাত্র সমাজ, যুব সমাজ, উঠতি বয়সি যুবতী, কিশোর, কিশোরী থেকে শুরু করে মাদকের ভয়ঙ্কর ছোবল থেকে রেহাই পাচ্ছেনা কোনো শ্রেণির মানুষ।

নেশার টাকা জোগাড় করতে চুরি, ছিনতাই, ব্ল্যাকমেইল, প্রতারণা সহ সমাজে ধর্ষণ ও খুনের মতো জঘন্য অপরাধের সাথে জড়িয়ে পড়ছে বিভিন্ন শ্রেণী পেশার যুবক ও কিশোররা। ফলে মাদকের লাগাম টেনে ধরার বিকল্প নেই বলে মনে করছেন সমাজের বিশিষ্ট জনেরা।

তারা বলেন, বিভিন্ন সভা সেমিনারে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা বক্তব্যে বলেন, সমাজ থেকে মাদক নির্মূল করা একবারেই সম্ভব নয়। তবে নিয়ন্ত্রণ করতে কাজ করছে প্রশাসন। বাস্তবে পাড়া মহল্লার দিকে দৃষ্টিপাত করলে দেখা যায়, মাদক নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। ডিবি পুলিশ ও র‌্যাব সদস্যরা অভিযান পরিচালনা করে মাদক যতটুকু আটক করে তাই ঢের।

এদিকে পিছিয়ে নেই রাজশাহী মহানগরীর উপকন্ঠ আন্ধার কোঠা, হরিপুর, কাশিয়াডাঙ্গা, মতিহার থানা অঞ্চল। এ সকল এলাকায় হাত বাড়ালেই মিলে সকল ধরনের নেশা। তাছাড়া এই সব অঞ্চলে মাদকের বিরুদ্ধে পুলিশের কোনো উল্লেখযোগ্য অভিযান নেই বললেও ভুল হবেনা। বরং তথ্য দিলে মুখ ফ্যাকাশে হয়ে যায় তাদের। অজ্ঞাত কারণে মাদক ও মাদক কারবারি ধরতেও অনিহা দেখায় পুলিশ। আরএমপি’র এমনও থানা আছে যে থানার পুলিশ মাদক পল্লি গুলিতে অভিযান করে না। শুধু তাই নয় মাদক স্পটগুলিতে পুলিশ গেলে রাগ করেন ওসি সাহেব। এ নিয়ে খোদ থানা পুলিশের মধ্যেও রয়েছে অন্তোষ আর চাপা ক্ষোভ।

কাটাখালি থানা অঞ্চলে যে সকল মাদক পাড়া রয়েছে। সেখানে পুলিশ আবার চেকপোস্ট বসিয়ে মোটরসাইকেল থামিয়ে মাথা পিছু একশত টাকা হারে চাঁদা আদায় করে পুলিশ। ফলে রাজশাহী শহরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রতিদিন গড়ে হাজার খানিক যুবক-কিশোর এসব মাদক পল্লিগুলোতে গিয়ে নিরাপদে মাদক সেবন করতে পারে। অবাক হলেও এটাই বাস্তবতা।

যাইহোক মাদক পাচারের সবচেয়ে নিরাপদ রুটগুলো হলো গোদাগাড়ী উপজেলার চর আষাড়িয়াদহ, মানিকচক, কানাপাড়া, চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার কোদালকাটি, আলাতুলি, ঝাইলাপাড়া, ক্লাবঘাট প্রভৃতি এলাকা। ভারত থেকে হেরোইন, ফেনসিডিল, মদসহ অন্যান্য মাদকদ্রব্য পাচার করে নিয়ে আসে নিজ বাড়িতে কিংবা টাকার বিনিময়ে অন্যের বাড়িতে রাখেন, সে গুলো কোনো স্কুল, কলেজ, মাদ্রসা পড়ুয়া ছাত্রছাত্রী, গরুর রাখাল, সুন্দরী কিশোরী, গৃহবধূর মাধ্যমে পদ্মা নদীর এপারে গোদাগাড়ী পৌরসভার সিএন্ডবি, গড়ের মাঠ, মাদারপুর, হাটপাড়া, রেলওয়ে বাজার, কুঠিপাড়া, শিবসাগর, বারুইপাড়া প্রভৃতি এলাকার বাসাবাড়িতে রেখে রাজশাহী, নাটোর, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, পাবনা, মানিকগঞ্জ, ঢাকা, চিটাগাং, কুমিল্লাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পাচার করা হয়ে থাকে। মাদকদ্রব্য পাচার, ক্রয়-বিক্রয়ের সাথে জড়িত রয়েছে শত শত নানা ধরনের মানুষ। মাদকদ্রব্য ও চোরাচালানি পণ্য পাচার ক্রয়-বিক্রয়ই তাদের একমাত্র পেশা।

বেসরকারি এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, গত ২৫ বছরে গোদাগাড়ী উপজেলাসহ পৌরসভা এলাকার ৫ শতাধিক ব্যক্তি মাদকদ্রব্যের ব্যবসা করে শূন্য থেকে কোটিপতি হয়েছেন এবং লাখপতি হয়েছেন কয়েক হাজার। তাদের অবস্থান এখন সমাজের শীর্ষ স্থানে। কেউ কেউ কালো টাকার ছড়াছড়ি করে নির্বাচনে প্রভাব খাটিয়ে হয়েছেন চেয়ারম্যান, মেয়র, মেম্বার, কাউন্সিলর, রাজনৈতিক দলের তথাকথিত প্রভাবশালী নেতা, কথিত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিক। সঙ্গত কারণে তারা আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের ধরাছোঁয়ার বাইরে। মাদকদ্রব্য সেবন করে অকালে মারা গেছে, শতাধিক মাদকসেবী। আর মৃত্যুর প্রহর গুনছেন হাজার হাজার মাদকসেবী। লন্ডভন্ড বিকৃত মানসিকতা নিয়ে গড়ে উঠছে মাদকাসক্ত কিশোর, কিশোরী, যুবক, যুবতী। এদের মধ্যে না থাকছে আদর্শ নীতি নৈতিকতা, না থাকছে আবেগ বিবেক। কোনো কথা নাই, যেকোনো মূল্যে টাকা চাই। আর এজন্য মা, বাবা, ভাই, বোন কেউ তাদের নির্যাতনের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছে না। এই সব চোরাকারবারীর গডফাদারেরা নিয়োগ করেছেন শত শত এজেন্ট। উপজেলার খেয়াঘাট ছাড়াও তারা ব্যবহার করছেন প্রাইভেট নৌকা, কার, মাইক্রো, হোন্ডা, মোবাইল ফোন, ভারতীয় সিম এবং তাদের ভারতীয় এজেন্টদের নিকট রয়েছে বাংলাদেশি সিম যাতে সহজে অল্প খরচে সহজে কথা বলা যায়। ওই সব মাদক চোরাকারবারীর গডফাদারেরা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন মোবাইল সিম ব্যবহার করে থাকেন। অনেক সময় বিজিবি চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলা সীমান্তবর্তী আলাতুলি, কোদলকাটি এবং রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার সীমান্ত ডি.এম.সি চর আষাড়িয়াদহ প্রভৃতি এলাকায় কেজি কেজি হেরোইন, হাজার হাজার বোতল ফেনসিডিল আসামিসহ আটক করে থানায় মাদক আইনে মামলা দেন। ওই সব মাদক সম্রাটদের মাদকের মালিক হিসেবে আসামি করা হয়। কিন্তু রহস্যজনক কারণে মাদক বহনকারি লেবারদের সাজা হয়। গড ফাদাররা খালাস পায়। পরে গডফাদাররা উচ্চ আদালতে গিয়ে লেবারদের জামিনে মুক্তি করায়। এক সময় খালাস হয় তারাও।

মাদক ব্যবসায়ীরা সবসময় অসৎ জনপ্রতিনিধি, অসৎ রাজনৈতিক নেতা, পাতিনেতাদের হাত করে চলার চেষ্টা করে। প্রশাসনের কাছ থেকে নিজেকে আড়াল করতে অনেক সময় নিজেকে ক্ষমতাশীন দলের লোক, বিভিন্ন মহলে পরিচয় দেওয়ার চেষ্টা করেন। গোদাগাড়ী পৌরসভা ও উপজেলায় ভালো ভালো জায়গায় আলাতুলি, কোদালকাটি, চর আষাড়িয়াদহ এলাকার তালিকাভুক্ত মাদক ব্যবসায়ীরা মাটি কিনে রাজকীয় বাড়ি তৈরি করেছেন এবং প্রধান প্রধান বাজারে দোকান কিনে কথিত মোবাইল দোকান, গার্মেন্টস্, জুতা স্যান্ডেলের দোকান করেছেন। কিন্তু ওই সব দোকানে মূলত মালিক কোনো সময়ই আসেন না। অন্য লোক দিয়ে সারা বছর চালানো হয়। ওই সব কথিত দোকান ও বাড়ির আড়ালে চালানো হয় মাদক ব্যবসা। আবার অনেকেই সুখী নগরী হিসেবে খ্যাত রাজশাহী মহানগরীতে দামি বিল্ডিং, নজরকাড়া শোরুম, এসি চেম্বার নিয়ে আয়েশি জীবন যাপন করছেন। নেপথ্যে কোটি কোটি টাকার মাদকের চালান পাচার করাচ্ছেন লোক দিয়ে।

একাধিক স্থানীয়রা জানান, এসকল চোরাচালানী, মাদক সম্রাটেরা দেশ, জাতি, সমাজের শত্রু। এদের ভয়ঙ্কর থাবা থেকে দেশ ও দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যুবসমাজ বাঁচাতে হলে যেকোনো মূল্যে মাদক চোরাকারবার বন্ধ করতে হবে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে গোদাগাড়ী মডেল থানার ওসি মোঃ কামরুল ইসলাম জানান, মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। যত শক্তিশালী হোক না কেন মাদক কারবারীদের ছাড় দেওয়া হবে না।

খবরটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply